আপনি কি জুয়া খেলেন? বোধ হয় খেলেন না। নিশ্চয়ই টাকা হারানোর ভয়ে খেলেন না। আচ্ছা কেমন হয় যদি আপনাকে জুয়ার এমন একটা কৌশল আমি শিখিয়ে দেই যাতে করে আপনি ‘যে কোন’ পরিমান টাকা ‘নিশ্চিত ভাবে’ জিততে পারবেন? কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা? তাহলে আসুন আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই ‘সেইন্ট পিটার্সবার্গ প্যারাডক্স’ এর সাথে।
চলুন কোন একটি ক্যাসিনোতে যাওয়া যাক। এমন একটি জুয়া আপনি বেছে নিন, যেটা আপনি যত বার খুশি খেলতে পারবেন। ধরে নিচ্ছি প্রতিবারের খেলার ফলাফল স্বাধীন অর্থাৎ কোন একটি পর্বে আপনি জিতবেন কিনা তা আগের পর্বের ফলাফলের উপর নির্ভরশীল নয়। যে কোন পর্বে ধরে নিন ‘প’ হল আপনার জেতার সম্ভাব্যতা। যদি খেলাটি এমন হয় যে একটি মুদ্রা নিক্ষেপ করা হবে এবং শাপলা পড়লে আপনি জিতবেন, তাহলে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা ৫০% এবং ‘প’ = ০.৫, আবার যদি খেলাটি এমন হয় যে একটি ছক্কা নিক্ষেপ করা হবে এবং ‘৬’ পড়লে আপনি জিতবেন, তাহলে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা ১৬.৬৬% এবং ‘প’ = ০.১৬৬ হবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ‘প’ এর মান যত কম হবে, প্রতি পর্বে আপনার জেতার সম্ভাবনা তত কম হবে। তবে আমার কৌশলটি এতই শক্তিশালী যে ‘প’ এর মান অত্যন্ত কম হলেও কোন সমস্যা নেই, শুধু ‘প’ > ০ অর্থাৎ জেতার ন্যূনতম সম্ভাবনা থাকলেই চলবে।
প্রতি পর্বে আপনি ‘ক’ পরিমান টাকা বাজি ধরেন। যদি জিতে যান তাহলে ‘ক’ টাকা আপনাকে ক্যাসিনো দিবে, আর যদি হেরে যান তাহলে ‘ক’ টাকা ক্যাসিনোকে আপনার দিতে হবে। আশা করি জুয়ার নিয়মকানুন নিয়ে আপনার আর কোন সংশয় নেই। নিশ্চয়ই অস্থির হয়ে আছেন জেতার আসল “ট্রিক্স” টা জানার জন্যে। কৌশলটা আসলে খুবই সহজ। আপনি শুরুতেই সেই পরিমান টাকা বাজি ধরবেন, যে পরিমান টাকা আপনি আজকে জিততে চান। ধরা যাক আজকে আপনি ক্যাসিনো থেকে ১০০০/- টাকা জিততে চান। তাহলে আপনি খেলা শুরু করবেন ১০০০ টাকা বাজি ধরে। যদি আপনি জিতে যান, খেলা শেষ এবং আনন্দের সাথে ১০০০ টাকা পকেটে নিয়ে বাসায় চলে যান। যদি আপনি হেরে যান, তাহলে আপনার বাজি দ্বিগুণ করে আবার খেলুন এবং এভাবে না জেতা পর্যন্ত খেলতে থাকুন। কি আমার কৌশল ‘অবান্তর’ লাগছে? তাহলে নিচের টেবিলটা একটু খেয়াল করে দেখুন।
আগে হোক আর পরে হোক, যেহেতু ‘প’ > ০ ছিল, খেলা একসময় থামবেই এবং খেলা যখন থামবে, তখন আপনার পকেটে থাকবে ১০০০/- টাকা। গ্যারান্টিড!! কি এবার আমাকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন তো?
আচ্ছা বেশ টাকা না হয় জিতলেন, কিন্তু তাহলে এই কৌশল “প্যারাডক্স” কিভাবে হল? এমনকি হতে পারে যে এই খেলা কখনই থামবে না? না, কারন গানিতিক ভাবে প্রমান করা সম্ভব যে গড়ে ‘১/প’ সংখ্যক পর্বের মধ্যে খেলা শেষ হয়ে যাবে, অর্থাৎ যদি ‘প’ = ০.২ হয় তাহলে গড়ে ১/০.২ = ৫ টি পর্বের মধ্যেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। খেয়াল করবেন ‘গড়ে’ বলা হয়েছে, অর্থাৎ ৫ টির চেয়ে কম বা বেশিও লাগতে পারে।
শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্ন হল, কি পরিমান টাকা থাকলে এই কৌশল অবলম্বন করা যাবে? এর উত্তর থেকেই “প্যারাডক্স” এর উৎপত্তি। সম্ভাব্যতার বিভিন্ন সূত্র প্রয়োগ করে দেখান যায় যে, যদি খেলাটি ‘ফেয়ার’ও হয় অর্থাৎ যদি ৫০-৫০ সম্ভাবনা থাকে জেতার, গড়ে ‘অসীম পরিমান’ টাকার প্রয়োজন হতে পারে জেতার জন্য!! ১৭শ শতকে সুইস গনিতবিদ ড্যানিয়েল বার্নুলি এই প্যারাডক্সটি প্রস্তাবনা করেন। প্রবাবিলিটি থিওরি এবং ইকোনোমিক্স এর এই বিখ্যাত এবং মজার সমস্যাটির আরো অনেক গানিতিক এবং ব্যবহারিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন রয়েছে, তবে পাঠ্য-পুস্তকের ভাষায় বলতে গেলে, “those are beyond the scope of this writing”. সহজবোধ্য এবং ইনটুইটিভ ব্যাখ্যাগুলোর একটি হচ্ছে, কারো পক্ষেই ‘অসীম’ পরিমান অর্থের জোগান দেয়া সম্ভব নয় এবং সেক্ষেত্রে জেতার নিশ্চয়তাও দেয়া সম্ভব নয়। আরেকটি গুরুত্তপূর্ণ প্রায়োগিক কারন হল, বেশিরভাগ ক্যাসিনোতেই সর্বোচ্চ বাজির একটা সীমা নির্ধারন করা থাকে, যাতে করে কেউ এধরনের কৌশল সফলভাবে প্রয়োগ করতে না পারে।
সে যাই হোক, ছোট-খাট বাজি ধরে বন্ধুমহলে এই কৌশল প্রয়োগ করে কিছু কামানোর ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। দেখা যাক কি হয়।
— কায়সার
তথ্যসূত্রঃ Probability and Statistics for Computer Science – M. Baron এবং উইকিপিডিয়া।
.
.
.
মূল লেখার লিংক
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/43441